নওগাঁর ৬টি আসনে মনোনয়নপত্র বাছাইয়ে ৩৩ জন বৈধ, বাতিল-২২ জন




মুজাহিদ হোসেন, নওগাঁ জেলা প্রতিনিধি:

 দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নওগাঁর ৬টি আসনে মনোনয়নপত্র বাছাইয়ে ৩৩ জনকে বৈধ এবং ২২জনকে বাতিল করা হয়েছে। জেলা প্রশাসক ও জেলা রির্টানিং কর্মকর্তা মো. গোলাম মওলা বাছাই শেষে মনোনয়নপত্র বৈধ ও বাতিল ঘোষণা করেন। সোমবার সকাল ৯টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত দুই দফায় ৬টি আসনের চুড়ান্ত এই বাছাই কার্যক্রম অনুষ্ঠিত হয়।

বাতিল হওয়া প্রার্থীদের মধ্যে নওগাঁ-১ (নিয়ামতপুর, পোরশা ও সাপাহার) আসনে নিয়ামতপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য খালেকুজ্জামান তোতা ও সোহরাব হোসেনের পক্ষে সংসদীয় এলাকার ১ শতাংশ ভোটারের স্বাক্ষর সংবলিত সমর্থনসূচক তালিকায় ত্রুটিযুক্ত স্বাক্ষর ও মামলার তথ্য গোপন রাখায় তাদের মনোনয়ন ফরম বাতিল করা হয়। এ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদারসহ অন্য চার প্রার্থীর মনোনয়ন ফরমে ত্রুটি না পাওয়ায় তাদের মনোনয়ন বৈধ ঘোষণা করা হয়।

নওগাঁ-২ (পত্নীতলা ও ধামইরহাট) আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন জমা দেওয়া ছয় প্রার্থীরই মনোনয়নপত্র বাতিল করা হয়েছে। ঋণ খেলাপী হওয়া, মামলার তথ্য গোপন রাখা ও সংসদীয় এলাকার ১ শতাংশ ভোটারের স্বাক্ষরসংবলিত সমর্থনসূচক তালিকায় ত্রুটিযুক্ত স্বাক্ষরসহ বিভিন্ন অসঙ্গতির কারণে তাদের মনোনয়ন বাতিল করা হয়।

মনোনয়ন ফরম বাতিল হওয়া ওই ছয় প্রার্থী হলেন, নওগাঁ জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি আইয়ুব হোসেন, জেলা আওয়ামী লীগের বন ও পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক আমিনুল হক, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় উপ-কমিটির সাবেক সহ-সম্পাদক এইচএম আখতারুল আলম, নজিপুর পৌর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক কাজল চন্দ্র দাস, ধামইরহাট উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য আজিজার রহমান ও সাবেক ছাত্রলীগ নেতা মেজবাহুল আলম। নওগ-২ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী শহীদুজ্জামান সরকারসহ তিনজনের প্রার্থীতা বৈধ ঘোষণা করা হয়েছে।

নওগাঁ-৩ (মহাদেবপুর ও বদলগাছী) আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী সংসদ সদস্য ছলিম উদ্দিন তরফদার ও আওয়ামী লীগের প্রার্থী সৌরেন্দ্র নাথ চক্রবর্তীসহ পাঁচজনের মনেনয়ন ফরম বৈধ ঘোষণা করা হয়েছে। সেই সঙ্গে বিভিন্ন অসঙ্গতির কারণে কৌতুক অভিনেতা শামীনুর রহমান ওরফে চিকন আলী ও স্বতন্ত্র প্রার্থী বদলগাছী উপজেলা আওয়ামীলীগের উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য ডিএম মাহবুব-উল মান্নাফসহ পাঁচজনের মনোনয়ন বাতিল করা হয়েছে। মনোনয়ন বাতিল হওয়া অপর তিন প্রার্থী হলেন, বিএনএমের প্রার্থী জাবেদ আলী, এনপিপির প্রার্থী স্বপন কুমার দাস ও স্বতন্ত্র প্রার্থী ফিরোজ হোসেন। এছাড়াও তৃণমূল বিএনপির প্রার্থী সোহেল কবির চৌধুরীর মনোনয়ন ফরম স্থগিত রাখা হয়েছে।

নওগাঁ-৪ (মান্দা) আসনে বিভিন্ন অসঙ্গতির কারণে চারজনের মনোনয়ন ফরম বাতিল করা হয়েছে। এছাড়া মনোনয়ন ফরমে কোনো ত্রুটি না থাকায় আওয়ামী লীগের প্রার্থী নাহিদ মোর্শেদ, স্বতন্ত্র প্রার্থী বর্তমান সংসদ সদস্য ইমাজ উদ্দিন প্রামাণিক, স্বতন্ত্র প্রার্থী জেলা আওয়ামী লীগের সংস্কৃতিবিষয়ক সম্পাদক এসএম ব্রুহানী সুলতান মামুদসহ (গামা) সাতজনের মনোনয়ন বৈধ ঘোষণা করা হয়েছে। মনোনয়ন বাতিল হওয়া চার প্রার্থী হলেন, বাংলাদেশ কংগ্রেসের প্রার্থী কামাল পারভেজ, স্বতন্ত্র প্রার্থী আফজাল হোসেন, আব্দুস সামাদ ও জিয়াউল হক।

নওগাঁ-৫ (নওগাঁ সদর) আসনে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়া সাতজন প্রার্থীর মধ্যে একজনের মনোনয়নপত্র বাতিল করা হয়েছে। হলফনামায় স্বাক্ষর না থাকা ও আয়কর সম্পদ বিবরণীর তথ্য না দেওয়াসহ ত্রুটিযুক্ত মনোনয়ন ফরমের কারণে ন্যাশনাল পিপলস পার্টির (এনপিপি) প্রার্থী খন্দকার আমিনুর রহমানের (ফ্রবেল) মনোনয়ন ফরম বাতিল করা হয়। আওয়ামী লীগের প্রার্থী সংসদ সদস্য নিজাম উদ্দিন জলিল (জন), স্বতন্ত্র প্রার্থী জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আব্দুল মালেক ও নওগাঁ পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি দেওয়ান ছেকার আহমেদ শিষাণসহ ছয়জনের মনোনয়ন ফরম বৈধ ঘোষণা করা হয়েছে।

নওগাঁ-৬ (রাণীনগর ও আত্রাই) আসনে ১২ জন প্রার্থী মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন। এদের মধ্যে চার প্রার্থীর মনোনয়ন ফরম বাতিল ও আটজনের মনোনয়নপত্র বৈধ ঘোষণা করা হয়েছে। এই আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী নাহিদ ইসলাম, এম এ রতন ও শাহজালাল হোসেনের মনোনয়নপত্রের সঙ্গে সংসদীয় এলাকার ১ ভোটারের সম্মতিসূচক স্বাক্ষর তালিকায় অসঙ্গতিসহ বিভিন্ন ত্রুটি থাকায় তাঁদের মনোনয়ন ফরম বাতিল করা হয়।

এছাড়া ন্যাশনাল পিপলস পার্টির (এনপিপি) প্রার্থী খন্দকার ইন্তেখাব আলম হলফনামায় স্বাক্ষর না করায় তার মনোনয়ন ফরম বাতিল করা হয়। এছাড়া মনোনয়ন ফরমে কোনো ত্রুটি না পাওয়ায় আওয়ামী লীগের প্রার্থী আনোয়ার হোসেন, স্বতন্ত্র প্রার্থী ওমর ফারুক (সুমন) ও নওশের আলী, জাতীয় পার্টির প্রার্থী আবু বেলাল হোসেনসহ আটজনের মনোনয়ন বৈধ বলে ঘোষণা করা হয়েছে।

হলফনামায় তথ্য গোপন, এক শতাংশ নমুনা ভোটারের স্বাক্ষর ও তথ্যের গরমিলসহ বিভিন্ন ক্রটির কারণে এসব মনোনয়নপত্র বাতিল করা হয়েছে। আগামী ১৮ডিসেম্বর প্রতিক বরাদ্দ করা হবে। নির্বাচন বিধি মেনে সকল বৈধ প্রার্থীদের তাদের নির্বাচনী কর্মকান্ড পরিচালনার জন্য বিশেষ ভাবে অনুরোধ জানানো হয়েছে। যদি কোন প্রার্থী নির্বাচনী আচরন বিধি না মানেন তাহলে অভিযোগ পেলে সেই প্রার্থীর বিরুদ্ধে কঠোরতম আইনী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলেও জানান জেলা প্রশাসক ও জেলা রির্টানিং কর্মকর্তা মো: গোলাম মওলা। এসময় জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা তারিফুজ্জামান, জেলা অতিরিক্ত পুলিশ সুপার গাজিউর রহমানসহ বিভিন্ন দপ্তরের প্রধান ও প্রার্থীগণ উপস্থিত ছিলেন।

0/Post a Comment/Comments